কাহারও সুস্থদেহে কোন একটি ঔষধ পুনঃ পুনঃ প্রয়োগ করিলে ভেষজ লক্ষণজাত কতকগুলি পীড়া সদৃশ লক্ষণ প্রকাশ পাইতে থাকে; কোনও পীড়ার সেই সমস্ত লক্ষণ প্রকাশিত হইলে সেই পীড়ায় সেই ঔষধের সূক্ষ্ণমাত্রার দ্বারা চিকিৎসা করাকেই হোমিওপ্যাথি বা সদৃশ বিধান চিকিৎসা কহে।
মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এই চিকিৎসার ভিত্তিস্থাপক।তিনি জার্মেনীর একজন খ্যাতনামা উচ্চপদবীধারী এলোপ্যাথিক ডাক্তার।তিনি প্রধান প্রধান চিকিৎসালয়ে বহু রোগী চিকিৎসা করিয়া অবশেষে বুঝিতে পারিলেন যে, অনুমানে রোগ নির্বাচন করিয়া অনেক স্থলে আনুমানিক ঔষধ প্রদান করিয়া তাহাতে ভয়ঙ্কর অনিষ্ট উৎপাদিত হয়, এমন কি শেষে অনেক রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটিয়া থাকে, এজন্য তিনি বড়ই অনুতপ্ত হইলেন ও শেষে এইরূপ ভ্রমপূর্ণ চিকিৎসার দ্বারা অসদুপায়ে অর্থোপার্জ্জন লালসা পরিত্যাগ করিয়া পুস্তক অনুবাদ দ্বারা জীবিকা নির্ব্বাহে কৃতসঙ্কল্প হইলেন।একদিন তিনি একখানি "মেটিরিয়া মেডিকা" তর্জ্জমা করিবার কালীন দেখিলেন যে, সুস্থ শরীরে সিংকোনাছাল সেবন করিলে কম্পজ্বর উপস্থিত হয়, আবার সিংকোনাই কম্পজ্বরের প্রধান ঔষধ।এইটিই মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের এই নতুন চিকিৎসা আবিষ্কারের মূল সূত্র হইল; তিনি তৎপরে ঐ সূত্রে নিজে কতকগুলি ভেষজ দ্রব্য সেবন করিয়া যে যে লক্ষণ সমূহ উৎপাদিত হয় তাহা পরীক্ষা করিলেন এবং কোনও পীড়ায় সেই সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ পাইলে সেই ভেষজ দ্রব্য প্রদান করিয়া রোগীদের রোগমুক্ত করিতে লাগিলেন। মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এখনও পূর্ব্বের মত এলোপ্যাথিক অর্থাৎ স্থূলমাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করিতেছিলেন;ইহাতে তিনি এখন দেখিতে পাইলেন যে, রোগ আরোগ্য হইলেও কিছুদিন পরে রোগীর পুনরায় কতকগুলি নতুন নতুন কুলক্ষন উৎপাদিত হয়। যেমন কুইনাইন সেবনে জ্বর আরোগ্য হয়; কিন্তু পরে রক্তশূন্যতা প্লীহা, যকৃত, ন্যাবা, শোথ, ঘুষঘুষে জ্বর ইত্যাদি নানা প্রকার নতুন উপসর্গ প্রকাশিত হইয়া রোগীকে জর্জ্জরিত করিয়া তুলে। তিনি এই সময় হইতে ঔষধের পরিমাণ কমাইতে আরম্ভ করিলেন, ইহাতে দেখিলেন যতই পরিমাণ স্বল্প হয়, আরোগ্যদায়িনী শক্তি পূর্ব্বের মতই থাকে; কিন্তু উপরোক্ত প্রকারের কুফলগুলি উৎপাদিত হয় না, অবশেষে তিনি ঔষধগুলির পরিমাণ ক্রমশঃ ভগ্নাংশ আকারে প্রয়োগ করিতে আরম্ভ করিলেন এবং সেই ভগ্নাংশ ঔষধগুলিকে ফ্রেঞ্চস্পিরিট, দুগ্ধ শর্করা ও পরিস্রুত জল ইত্যাদি ভেষজ বিহীন দ্রব্যের সহিত মিশ্রিত করিয়া ব্যবহার করিতে লাগলেন, ইহাই এমন সদৃশ বিধান (হোমিওপ্যাথিক) চিকিৎসা নামে প্রচলিত হইতেছে। মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ১৭৫৫ খৃষ্টাব্দের ১০ই এপ্রিল জার্মান সাম্রাজ্যের অন্তবর্ত্তী সাক্সনি প্রদেশে মাইসেন নামক একটি ক্ষুদ্র পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৪৩ খৃষ্টাব্দের ২রা জুলাই ইহজগৎ পরিত্যাগ করিয়া উননব্বই বৎসর বয়ঃক্রমে চিকিৎসা বিধানে অক্ষয় কীর্ত্তি স্থাপন করিয়া অমরধামে গমন করেন। "কীর্ত্তির্যস্য গ জীবতি" আজ কে বলিবে তিনি ইহজগতে নাই! আমরা তাঁহাকে এখনও জীবিত বলিয়া অনুভব করি।

0 Comments